Araku a heaven on Eastern Ghats আরাকু পূর্ব ঘাটের স্বর্গ

#Arakudiaries #Visakhapatnam #Arakuvally #Borra Caves #Ananthagiri #Hills
প্ল্যানিং তো চলছিল প্রায় ৫-৬ মাস ধরে , এবং শেষ মেশ সেটা একটা প্ৰবল বিবাদের জায়গায় চলে গেছিলো। ভাইজাগ গেলে কোথায় বেশি সময় কাটাব , আরাকু না ভাইজাগ শহর । কারন ছুটি খুব অল্প।
যাই হোক শেষমেশ অর্ণব এর পরামর্শে আমরা স্থির করি যে দুই দিন আরকুর দুটি বিখ্যাত রিসোর্ট এ আমরা থাকবো।এবং আরাকুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কে প্রাণ ভরে উপভোগ করবো।
এবং সেই দিনকের অর্ণব এর ওই পরামর্শ টা না মানলে আজ হয়ত এই ব্লগটা লেখার সুযোগই হতো না।
আমরা ভাইজাগ পৌঁছেছিলাম ১৭ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ১১ টা নাগাদ।হোটেল এ পৌঁছে সেদিনের মত স্থানীয় কিছু দর্শণীয় জায়গা দেখে (রুসীকোনডা বীচ , কইলাশগীরি পাহাড় এগুলো আমি অন্য ব্লগ এ ডিটেইলস দেবো) তাড়াতাড়ি হোটেল এ এসে শুয়ে পড়লাম। ইতিমধ্যে বলে রাখি আরকু যাওয়ার জন্য গাড়ির সন্ধান আমরা এই গ্রুপের একজনের পোস্ট থেকেই পেলাম এবং ভাগ্য ক্রমে আমাদের ড্রাইভার টি কিন্তু খুব স্মার্ট হাসিখুশি এবং মিশুকে ছিল। ওহ ! নাম টা বলা হলোনা ওর নাম ছিল রাজু। রাজুই আমাদের স্থানীয় টুরিস্ট স্পট গুলো তে নিয়ে গিয়েছিল।
১৮.১০.১৮ || পরেরদিন সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম ভাইজাগ স্টেশন। ৫৮৫০১ কিরণ্ডুল প্যাসেঞ্জার একদম সঠিক সময়ে (৬:৫০) ভাইজাগ স্টেশন থেকে ছেরে দিল।আমরা সবাই শুধু মাত্র এই ট্রেন ভ্রমণের অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। যাইহোক বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি আমাদের।খানিক পরেই জানলা দিয়ে পূর্বঘাট পর্বতমালার সবুজ শৃঙ্গ গুলি আমাদের ডান পাশে দেখাদিতে শুরু করলো।

এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল সুদীর্ঘ ৫৩ বছর আগে এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই লাইনে টি সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে এর অধীন ছিল। পরবর্তীতে এই লাইন টি সাউথ কোস্টাল রেলওয়ে তে চলে আসে। কথালাভাসা থেকে কিরণ্ডুল পর্যন্ত ৪৪৫ কিমি দীর্ঘ এই ট্রেন লাইনে টি প্রাথমিক ভাবে বসানো হয়েছিলো আকরিক ও খনিজ পদার্থ পরিবহণ করার জন্য।এই লাইনে মোট ৫৮ টি টানেল ও ৮৪ টি ছোট ও বড় টানেল রয়েছে।

সিভালিঙ্গাপুরাম স্টেশন থেকেই মোটামুটি ভাবে আমরা পূর্বঘাট পর্বত মালার ওপরে চড়তে শুরুকরে দিলাম। ট্রেন টি একের পর এক টানেল ও পাহাড়ি ব্রিজ পেরিয়ে যেতে থাকলো।আস্তে আস্তে টাইডা , বোরা গুহালু স্টেশন পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম সিমলিগুদা স্টেশন। এটি ভারতবর্ষের সবথেকে উঁচু ব্রডগেজ স্টেশন যার উচ্চতা ৯৯৭ মিটার।এরপর ট্রেন নামতে শুরু করে দিলো সমতলের দিকে এবং অবশেষে আমরা পৌঁছলাম আরাকু ভ্যালি তে সকাল ১০:৪৫ নাগাদ । রাজু তার বাহন টি (টয়োটা ইনোভা) নিয়ে স্টেশন এর বাইরেই আমাদের অপেক্ষায় ছিল।

আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল আরাকু ট্রাইবাল মিউজিয়াম।এই মিউজিয়াম টি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। অন্যান্য মিউজিয়াম এর মত এই মিউজিয়াম টি কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক মিউজিয়াম নয়। এটি প্রধানত তৈরী করা হয়ে ছিলো আরাকু ভ্যালির আদিবাসী উপজাতি দের সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রীতি নীতি গুলি ভ্রমণার্থী দের কাছে তুলে ধরার জন্যে।
আরাকু ট্রাইবাল মিউজিয়াম টি দুটি ভাগে বিভক্ত।প্রথম ভাগে আরাকু উপজাতি দের বিভিন্ন সাংস্কতিক ও শিল্পকলার প্রদর্শন ও তাদের ব্যাবহৃত বিভিন্ন মাটির বাসন , নৃত্য শৈলী ইত্যাদি আমরা দেখতে পেলাম। দ্বিতীয় ভাগে প্রধানত স্থানীয় উপজাতি দের দ্বারা পরিচালিত বেশ কিছু স্টল আমরা দেখলাম যেটা আমাদের দলের মহিলাদের অনেক টা সময় নিয়ে নিয়েছিল।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কফি মিউজিয়াম।আরাকু ভ্যালির কফির ইতিহাস এবং কফি প্রেমিক দের আদর্শ স্থান এই কফি মিউজিয়াম টি। এ ছাড়াও বেশ কিছু খাবার স্টল ও বাচ্চা দের খেলার বেশ কিছু রাইড ছিলো এখানে।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার আগে আমরা লাঞ্চ এর জন্য দারালাম এক বাঙালি হোটেলে যার নাম আবার ছিলো "মাসী পিসির হোটেল"।খাবার খুব ভালো এবং রান্নাও বেশ দারুন ছিল ।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিলো গালিকোনডা ভিউ পয়েন্ট , পশ্চিম ঘাট পর্বত মালার সবথেকে উঁচু স্থান। ১৫০০ মিটার উচ্চতায় সম্পূর্ণ পূর্বঘাট পর্বত মালা কে এখান থেকে খুব ভালো ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। এটি অনন্ত গীরি হিলস এরও প্রবেশ দ্বার।খানিক ফটো শুট এর পর আমরা চললাম কফি বাগান এর পথে।বাগানের টাটকা কফি র স্বাদ সত্যি অতুলনীয় ছিল যা কিনা আমরা পেলাম এই কফি গার্ডেন এর ছোট্ট স্টল গুলো থেকে কফি খেয়ে।

বাগানে খানিক বিরতির পর অবশেষে আমরা এসে পৌঁছলাম আমাদের আজকের যাত্রাপথের শেষ গন্তব্যে।হরিথা হিল রিসর্ট যেটা কিনা একদম অনন্ত গীরি হিলস এর ওপর অবস্থিত অন্ধ্র প্রদেশে টুরিসম এর পরিচালিত একটি হিল টুরিস্ট রিসর্ট। একথায় বলতে গেলে এই রিসর্ট টির অবস্থান এমন জায়গায় যেখান থেকে চারিদিক জুড়ে শুধু পূর্বঘাট পর্বত এবং তার নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার অতুলনীয় সুযোগ আমাদের কাছে এসে গেছিলো। যেটার সম্পূর্ন সদব্যবহার আমরা করেছিলাম। আমরা তিনটে ফ্যামিলি তিনটে আলাদা কটেজে ছিলাম এবং প্রত্যেক টা কটেজে থেকে পেছনের পাহাড় দেখা যেত ।

বিকেলের সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখার পর হালকা শীতের আমেজ গায়ে মেখে আমরা এলাম রিসর্ট এর রেস্তোরাঁ তে । কফি র স্বাদ কিন্তু এখানেও ছিলো এক কথায় দারুন।রাতের আকাশের মায়াবী আলোর ছটায় কিছু সময় রিসর্ট এর খোলা গার্ডেন এ কাটিয়ে আমরা লাঞ্চ এর অর্ডার দিলাম।ইন্ডিয়ান চাইনিজ সব কিছুই রিসর্ট এর রেস্তোরাঁ তে পাওয়া যাবে যে সেটা ভাবিনি।ওহ আরেকটা কথা রিসর্ট এ আসার পথে অন্তত ৫০০ মিটার আগে থেকেই আমরা আজকের ডিজিটাল জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলাম । রিসর্টে কোনরকম নেটওয়ার্ক ছিলনা।এবং যেটা কিনা আমাদের এই অতুলনীয় জায়গা ও এই দূষণ মুক্ত প্রকৃতির সাথে একেবারে মিশে যেতে দারুন সাহায্য করেছিল।

১৯.১০.১৮ || খুব ভোরে উঠে সবাই মিলে বেরিয়ে পরা হলো এবং এক প্রস্থ ফটো সেশন এর পর ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেরিয়ে পরলাম আমাদের আজকের প্রথম গন্তব্য বোরা কেভস এর পথে। আমাদের প্ল্যান ছিলো ওখানে বিখ্যাত বাম্বু চিকেন এর সাথে লাঞ্চ সারবো।রাজু আগে থেকেই হোটেল ঠিক করে রেখে ছিলো।যাই হোক পরবর্তী কলে সেই হোটেল এ লাঞ্চ সারতে গিয়ে কি হয়েছিল সে এক অন্য কাহিনী।যাইহোক আমরা আসি বোরা কেভস এর কথায়। এটি ভারতবর্ষের অন্যতম বড় গুহা গুলির মধ্যে একটি যার সবথেকে গভীরতম স্থান প্রায় মাটির নীচে ১৫০ ফুট গভীরতায় রয়েছে। বোরা কেভস ইতিহাস ও সম্পূর্ণ বর্ণনা দিতে আমায় আরেক টি ব্লগ এর ওপর লিখতে হবে।যাই হোক চুনা পাথরের তৈরী এই প্রাকৃতিক গুহা মন্ডলীর সৌন্দর্য্য এই জায়গা টিতে না এসে লেখায় বর্ণনা করা এক কথায় অসম্ভব।গুহার মূল দ্বারে পৌঁছে ভীর দেখে তো আমরা ভেবেছিলাম আজ হয়তো গুহার ভেতরে ঢোকার সুযোগ আমাদের হবেনা।


অবশেষ প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর গুহায় ঢোকার সুযোগ আমাদের হয়েছিলো। কিন্তু গুহার ভেতরে প্রবেশ করার পর অপেক্ষার সমস্ত ক্লান্তি দুর হোয়ে গেছিলো। বেশ কিছক্ষন সিড়ি দিয়ে নামার পর আমরা পৌঁছলাম গুহার ঠিক সেই স্থানে যার ঠিক ওপর দিয়ে রেল লাইন টি গেছে।আসে পাশের অনেক লোক আরো গভীরে প্রবেশ করছিলো আমরা আর বেশি আগে যাওয়ার সাহস আর করিনি।

আমাদের আজকের রাত্রিবাস ও অন্তিম গন্তব্য ছিল "জাঙ্গল বেল নেচার রিসর্ট টাইডা" , যেটা কিনা অন্ধ্রপ্রদেশে টুরিসমের আরেকটি নেচার রিসর্ট কাম্প।আমাদের আগে থেকেই রুম বুক করা ছিলো এবং এখানেও আমরা তিনটে আলাদা কটেজ পেয়েছিলাম। রিসর্ট টি ছিল একদম পাহারের গা বেয়ে।আমাদের কটেজ গুলি এক একটা এক রকম উচ্চতায় অবস্থিত ছিল। যার ফলে আমাদেরকে বেশ চড়াই উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছিল নিচের রেস্তোরাঁ তে।
আমাদের আরাকু ভ্যালি জার্নি র শেষ রাত্রি যেটা কিনা দারুন কেটেছিল কটেজ এর বোন ফায়ার ও আদিবাসীদের নৃত্য দেখে।

২০.১০.১৪ || খুব ভোরের বাতাস ও সবুজ পাহাড় এবং সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আমরা রওনা দিলাম ভাইজাগের উদ্দেশ্যে। আরাকু ভ্রমণ কাহিনীর প্রায় শেষের দোরগোড়ায় পৌঁছে একটাই কথা আমার মনে হচ্ছিলো, জার্নি টা যেন আমাদের শেষ না হয়।

আমার পরবর্তী ব্লগ ভাইজাগ টুর। পড়তে থাকুন ও ভাল থাকুন || এবং ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার করুন ও কমেন্ট এ লিখে জানান লেখা কেমন লাগলো।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক ও তথ্য ||
আরাকু ভ্যালি টুর কন্টাক্ট ড্রাইভার রাজু ||
#৯৪৪০৫২২১৪৭
অন্ধ্র প্রদেশ টুরিসমের রিসর্ট বুকিং ||
https://tourism.ap.gov.in/home
|| আরাকু ট্রেন জার্নির একটা ভিডিও লিংক নিচে দিলাম
https://youtu.be/OuayeLZmI3I
|| রিসর্ট গুলির আরো কিছু ফটো নিচের এই লিংক গুলো তে দিলাম।
|| হারিথা হিল রিসর্ট ||
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=250856465599893&id=166649354020605
|| জঙ্গল বেলস নেচার কাম্প ||
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=251154905570049&id=166649354020605

Comments

Popular Posts