টাইম ট্রাভেল বা সময় যাত্রা কি আদৌ সম্ভব ? Is Time Travel Possible


কল্প বিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশান এর একটি অন্যতম আলোচিত বিষয় এই টাইম ট্রাভেল বা সময় যাত্রা।

এটার সমন্ধে আলোচনা করার আগে আপনাদের কে দুটি ঘটনার কথা বলি

 ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া কানাডা তে এমন একজন ব্যক্তি কে দেখা গিয়েছিল , যাকে দেখে মনে হচ্ছিল উনি অন্য কোনো সময় বা যুগ থেকে এসেছেন।ওই ব্যক্তির বেশ ভুসা ও তার হাতের একটি ডিজিটাল ক্যামেরা বলে দিছিলো যে উনি ওই সময়ের ননকারণ ১৯৪০ সালে ডিজিটাল ক্যামেরাই ছিল না। তাহলে কি ওই ব্যাক্তি একজন টাইম ত্রাভেলার যিনি ফিউচার থেকে অতিতে টাইম ট্রাভেল করে এসেছিলেন ?

জেনিফার লরেন্স আমেরিকার একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী যিনি বিগত ৬-৭ বছর ধরে প্রচারের আলোয় রয়েছেন , কিন্তু তার আগে তিনি কি করতেন কেউ জানে না।অনেকে বলেন তিনি অতীতে এখন Egyptian অভিনেত্রী ছিলেন এবং তার নাম ছিল যুবেদার থারওয়াট।তিনি লরেন্স ওফ আরাবিয়া নামে মুভি তে অভিনয় করেছিলেন।তিনি একজন টাইম ট্রাভেলার এটা অনেকে মনে করেন।

সময় আসলে কি ? সময় কেনো সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে যায় ? এই সবের প্রশ্নের জবাব আজ থেকে এক শতাব্দী আগে হয়ত করার জানা ছিল না ।

কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা (e=এমসি স্কোয়ার) প্রমাণ করলো সময় ধ্রুবক নয়।এক এক মানুষের কাছে সময় এক এক রকম হতে পারে।

একজন স্থির মানুষের সাপেক্ষে একজন গতিশীল মানুষের সময় অনেক ধীরে যায়।

তো বন্ধুরা  সময়যাত্রা বা টাইম ট্রাভেল আমরা সবাই অনেক দেখেছি বা শুনেছি , এটি শুনতে বা বুঝতে যতটা মজাদার লাগে, ব্যাপার টা বোঝা ততটাই complicated বা জটিল।

স্পেস এ লাইট এর গতিবেগ প্রত্যেক বস্তুর জন্য কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুবক।
আপনি স্থির হন বা আলোর গতিবেগ যাত্রা করুন এই দুই ক্ষেত্রেই লাইট এর গতিবেগ ৩ লাখ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডই হবে , এবং সময় ভরের ওপরেও নির্ভর করে, অত্যাধিক ভর বিশিষ্ট মহাকাশীয় বস্তু স্পেস টাইম কে বেন্ড করে দেয় যার ফলে সময় স্লো হয়ে যায়।

বন্ধুরা এগুলি সব এক একটি মাথা ঘুরিয়ে দেওআর মত কনসেপ্ট।
এই সব জিনিস আমরা কখনো পৃথিবী তে থাকা কালীন এক্সপেরিয়েন্স করতে পারিনা।


 আপনি যদি টাইম ট্রাভেল করা মুভিজ দেখে থাকেন তাহলে আপনার মনে নিশ্চই এই প্রশ্ন টি জেগেছে যে টাইম ট্রাভেল করা কি সত্যি সম্ভব ?  যদি সম্ভব হয় তো কিভাবে ?


যদি আমরা অতীত এর কথা চিন্তা করি , তাহলে এটা বলা যায় অতীতে টাইম ট্রাভেল করা বেশ একটি জটিল বিষয়।
তার কারন  এটার সাথে ইউনিভার্স এর একটি সত্য বিরোধী মত জুড়ে আছে।

এটা কে একটু সহজ করে দেখা যাক।মনে করুন বিজ্ঞানের দ্বারা এমন কোনো warm whole  বানানো সম্ভব হলো যার সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সময়ের পেছনে যেতে পারে যে সময় সে পেছনে ফেলে এসেছে , এবং সেখানে গিয়ে সে নিজেকেই নিজে গুলি করে মেরে ফেলে
তাহলে এই খানে একটি প্যারাডক্স বা বৈপরীত্যের সৃষ্টি হয় , যে ভবিষ্যতের থেকে আসা একজন মানুষ তার নিজের অতীতেই মারা গেছে।

অতীতে টাইম ট্রাভেল করতে গেলে বিজ্ঞানী দের মতে এইরকম অনেক প্যারাডক্স এর সৃষ্টি হয়। তাই অতীতে টাইম ট্রাভেল করা অনেক কঠিন।কিন্তু এটি পুরোপুরি অসম্ভবও নয়।


তো বন্ধুরা , চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক টাইম ট্রাভেল এর প্রথম সাইন্টিফিক পদ্ধতি কি।

আইনস্টানের রেলাতিভিটি থিওরী এটাই বলে যে স্পেস ও সময় দুটোই একই আস্পেক্ট এর মধ্যে পরে।কোনো বস্তু যদি আলোর বেগে যাত্রা করে তাহলে ওই বস্তুটির সাপেক্ষে সময় ধীরে হয়ে যায়।
এটা আরো সহজ করে বোঝালে 
ধরুন কোনো ব্যক্তি যার বয়স্ ১৫ এবং তিনি আলোর বেগে একটি স্পেস ক্রাফট এ চেপে পৃথিবী থেকে যাত্রা করলেন।
তাহলে যখন তিনি ৫ বছর কাটিয়ে আবার পৃথিবি তে ফিরে আসবেন ততক্ষনে তার বয়স হবে ২০ বছর।
কিন্তু তার বন্ধুদের যাদের কে তিনি পৃথিবি তে ছেড়ে গেছিলেন তাদের বয় এই থিওরী অনুযায়ী হয়ে যাবে ৬৫ বছর।
এর কারণ, আলোর গতিবেগে যাত্রা করার দরুন ওই ব্যক্তির জন্য সময় ধীরে গিয়েছে তাদের সাপেক্ষে যাদের কে ওই ব্যক্তি পৃথিবী তে ছেড়ে গিয়েছিলেন
এই ঘটনা টিকে Time Dilation বলে। এটার কারণেই ওই ব্যক্তি স্পেসে মাত্র ৫ বছর কাটিয়ে আসলেও পৃথিবী তে তার বন্ধুরা পুরো ৫০ বছর কাটিয়ে ফেলেছে।
এই টাইম ডাইলেশন এর কিছু টা এফেক্ট আমরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এ দেখতে পাই।
যেখানে পৃথিবী র তুলনায় সময় কিছু টা স্লো হয়।
কারন এটি খুবই দূরন্ত গতিতে পৃথিবি কে প্রদক্ষিণ করছে।
সুতরাং বন্ধুরা এটা আপনারা বুঝেই গিয়েছেন যে আলোর গতিতে যাত্রা করতে পারলে টাইম ট্রাভেল সম্ভব।

এটি ছিল টাইম ট্রাভেল এর প্রথম সাইন্টিফিক থিওরী।
চলুন এবার জানা যাক টাইম ট্রাভেল এর দ্বিতীয় পদ্ধতি বা উপায় সমন্ধে।

আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি আমাদের বলে যে গ্রাভিটি সময় কে slow বা ধিরে করতে পারে।
সুতরাং যেখানে গ্রাভিটি বা ভর বেশি থাকবে সেখানে সময় ধীরে অতিবাহিত হবে।
স্পেস টাইম কে যদি একটি চাদর বা ফেব্রিক হিসেবে ধরা হয় তাহলে এর ওপরে রাখা যেকোনো বস্তুর ভর বা মাস এই স্পেস টাইম এর ওপর একটি গর্ত তৈরি করে , এই গর্ত টিকেই আমরা গ্রাভিটি বলি।
এই গর্তটি যত গভীর হবে সেটি স্পেস টাইম কে ততই স্লো করে দেবে।
থিওরী তে এটা আমরা বুঝতে পারছি কিন্তু প্রশ্ন হলো এর দ্বারা আমরা টাইম কি ভাবে ট্রাভেল করতে পারবো?

উত্তর হলো ব্ল্যাক হোল যার গ্রাভিটি সময় কেও স্লো করে দেয়।
বন্ধুরা ব্ল্যাক হোলের সমন্ধে বিস্তারিত আমি অন্য একটি ভিডিও তে বলবো।

যদি আপনি ক্রিস্টোফার নোলান এর (Interstellar) movie টি দেখে থাকেন তাহলে আপনি এটি কে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
যদি এমন কোনো স্পেস ক্রাফট বানানো যায় যেটা ব্ল্যাকহলে যাত্রা করতে পারবে তাহলে আমরা টাইম ট্রাভেল করতে পারবো।
বর্তমানের সাপেক্ষে হয়তো এটি কে অসম্ভব  বলে মনে হচ্ছে কিন্তু ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা এটি হয়ত সম্ভবও হতে পারে।

টাইম ট্রাভেল করার তৃতীয় পদ্ধতিটি হলো ওয়ার্ম হোল।
ওয়ার্মহোল হচ্ছে এমন একটি ক্ষুদ্র সুড়ঙ্গ, যা অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরের দুটি ঘটনা বিন্দুকেও স্পেস ফেব্রিকের সংকোচনের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি দূরত্বে নিয়ে আসে। 
সুতরাং, ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে আলোর অধিক গতিবেগ ছাড়াই ভবিষ্যৎ পরিভ্রমণ সম্ভব।
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে, এখনও তাহলে কেউ ওয়ার্মহোলে করে ভবিষ্যত ভ্রমণ কেন করতে পারেনি ?
এর উত্তর হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মহাবিশ্বে ওয়ার্মহোল খুব মাঝে মাঝে সামান্য কিছু সময়ের জন্য আবির্ভূত হয়। 

সুতরাং, টাইম ট্রাভেল theoritically সম্ভব হলেও বাস্তবিকভাবে এখন পর্যন্ত ভবিষ্যত পরিভ্রমণ করার মতো কোনও প্রযুক্তি বা স্পেস ক্রাফট আবিষ্কৃতই হয়নি।

আমি আমার ভিডিওর শুরুতেই বলেছিলাম অতীতে টাইম ট্রাভেল একটু জটিল এবং একপ্রকার অসম্ভব।
টার আকচুয়াল কারন   সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি'  'গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স থিওরি'
সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি অনুযায়ী, কেউ অতীত ভ্রমণ করলেও সে প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। প্রকৃতি তাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে দেবে না।

সব থেকে interesting গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স থিওরি এই থিওরি অনুযায়ী  ধরে নিচ্ছি, আমি ৮০ বছর অতীতে গিয়ে আমার ঠাকুরদাদাকে গুলি করে মেরে ফেলি, তাহলে আমি আসবো কোথা থেকে
আমার বাবা যদি জন্মই না নেয় তাহলে তো আমারও জন্ম নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্ত আমি তো আছি! তাহলে আমি আসলাম কোথা থেকে! একপ্রকার ধাধা লেগে জাছে তাইতও ?
অতীত পরিভ্রমণ সম্পর্কিত এই গোলমেলে সমস্যাকে বলে গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স।


এখন এই দুই সমস্যা সামনে আসার পর বিজ্ঞানীরা এর আপাত সমাধান হিসেবে প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলেছেন।
প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি মতে, আমাদের এই ইউনিভার্স এর সাথে পারাল্লালি আরো একই ধরনের  অনেকগুলি ইউনিভার্সে থাকা সম্ভব। 

এই থিওরী অনুযাই আমাদের মত দেখতে মানুষ আরো ৭ টি ইউনিভার্স এ উপস্থিত আছে।এবং সেখানে আমরা ভ্রমণ করতে পারি টাইম ট্রাভেল এর দ্বারা।এবং সেখানে গিয়ে আমি যদি আমার থাকুরদাদা কে মেরেও ফেলি তাহলেও এই উনিভেরসে আমার আমি হউয়া আটকাবে না।
কারন ওই উনিভেরসে আমি হয়ত অন্য কেউ।
বন্ধুরা কিরকম অবাক লাগছ  তাইতো ?

এটি একটি দারুন ইন্টারেস্টিং টপিকপ্যারালাল ইউনিভার্সের সমন্ধে আমরা বিস্তারিত অন্য একটি ভিডিও তে আলোচনা করবো।

তো বন্ধুরা আজ আমরা জানলাম টাইম ট্রাভেল কি ভাবে সম্ভব ও তার সম্পর্কিত থিওরীগুলি।



ধন্যবাদ বন্ধুরা।

Comments

Popular Posts